
তিনি বলেন, হেফাজতের লংমার্চ এবং মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশে তৌহিদি জনতার যে মহাজাগরণ শুরু হয়েছে, তাতে ভীত ও দিশেহারা হয়ে নাস্তিক-বামপন্থী এবং তাদের সহযোগীরা এখন মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরলমনা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা কর্মজীবী নারীদের ভুল বুঝিয়ে উসকে দিয়ে মাঠে নামাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বামপন্থী নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন কিছু নারী সংগঠন ও এনজিও বিভিন্ন নামে এরই মধ্যে রাস্তায় মানববন্ধন, সভা-সেমিনার করে হেফাজতে ইসলামের দাবির ব্যাপারে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছে। তাদের সহযোহিতা করছে সুশীল সমাজ নামধারী কিছু ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি। তারা হেফাজতের ব্যাপারে নানা বিষোদগার করা ছাড়াও হেফাজতের দাবি মানা হলে ‘দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে’ এবং ‘তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হবে’ মর্মে কাল্পনিক বক্তব্য দিচ্ছে। তারা নারী ও দেশের তৌহিদি জনতা এবং ইসলামের চিরায়ত সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে নাস্তিক-মুরতাদ ও তাদের দোসরদের এ অপচেষ্টাও সফল হবে না ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, যারা আজ হেফাজতের বিরুদ্ধে নারীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে, তারা অতি পরিচিত মুখ। তাদের বেশিরভাগই শাহবাগের নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চে গমনকারী এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণকারী। এসব পরিচিত মুখ সবসময় ইসলামের কৃষ্টি-কালচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে এবং বিজাতীয় ও ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত। এসব চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষীর কথায় এদেশের ধর্মপ্রাণ নারী সমাজসহ তৌহিদি জনতা বিভ্রান্ত হবে না।
তিনি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এদেশের তৌহিদি জনতা ছোটখাটো সব মতভেদ ভুলে ঈমানি দাবিতে এক হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি পূরণ করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও জীবনবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাই হবে সময়োচিত পদক্ষেপ। এর বাইরে অন্য চিন্তা করলে হেফাজতে ইসলাম দাবি আদায়ে তৌহিদি জনতাকে নিয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী এ ব্যাপারে আরও বলেন, আমরা আগেই বলেছি, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষাসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না কিংবা চাকরি করতে পারবে না—এমন কোনো বিষয় দাবির মধ্যে নেই। এ ব্যাপারে আমাদের দাবির বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে (এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ুন)
তিনি বলেন, মূলত শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে সেখানে নারী-পুরুষের যেভাবে অবাধ মেলামেশা, একত্রে রাত যাপন, এমনকি বৈধ সম্পর্ক ছাড়াই পর নারী-পুরুষের একই তাঁবুতে, একই কম্বলের নিচে অবস্থান করে রাত যাপনের ঘটনা ঘটছে। সেখানকার স্লোগান কন্যাখাতদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয় পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে। শাহবাগি নাস্তিকদের দাাবির মুখে একটি পত্রিকা তাদের একটি গল্প প্রত্যাহার করে, গল্পের জন্য ক্ষমা চেয়ে, গল্পের লেখক ক্ষমা চেয়ে ঘটনার সত্যতাই অনেকাংশে প্রমাণ করে দিয়ে গেছে। তারই প্রেক্ষিতে নারী-পুরুষের এ ধরনের অবৈধ মেলামেশা সব ক্ষেত্রেই বন্ধ করা, নারীদের শালীন পোশাক পরিধান করার ব্যবস্থা করা এবং নারীদের ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ যাবতীয় নির্যাতন থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। কোরআনের সুস্পষ্ট বিধানের লঙ্ঘন করে জাতীয় নারীনীতিতে যেসব ধারা সংযোজন করা হয়েছে, সেগুলো সংশোধন করার জন্যই আমরা শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি।
আল্লামা শফী বলেন, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ৬ এপ্রিল লংমার্চ শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ চলাকালে মূল মঞ্চের এক কিলোমিটারেরও বেশি দূরে একজন নারী সাংবাদিক বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনায় লাঞ্ছিত হওয়াকে পুঁজি করে ঢালাওভাবে হেফাজতে ইসলামকে নারীবিদ্বেষী হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। ঘটনার পর হেফাজতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে এও বলা হয়েছে, ওই নারী সংবাদকর্মীকে হেফাজতের কর্মীরাই প্রাণপণ চেষ্টা করে নিরাপদে গাড়িতে তুলে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, যা ভিডিও ফুটেজেও পরিষ্কার। এছাড়া আক্রমণকারীরা অনুপ্রবেশকারী এবং এটা হেফাজতের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে বলেও হেফাজতের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম নারী অবদমন নয়; বরং নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যেখানে নারীদের ন্যূনতম মানবিক অধিকারটুকু পর্যন্ত ছিল না, কন্যাসন্তান হলে জীবন্ত কবর দেয়া হতো, সম্পত্তিতে নারীদের কোনো অধিকারই ছিল না, যে সমাজে নারীকে অভিশাপ মনে করা হতো—সেই সমাজে নারীকে সবচেয়ে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি নারীকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে কন্যা সন্তান লালন-পালন কারীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং পুত্রসন্তানের তুলনায় কন্যাসন্তানের অধিকতর দেখভাল ও প্রয়োজন নির্বাহে বাবার প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে। আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান তথা ইসলামে নারীকে প্রদত্ত সে মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আজ ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীদের অধিকার সংরক্ষিত না থাকা এবং বিধি-বিধান না মানার কারণেই নারীরা হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিভিং, যৌতুকের অভিশাপ ও যৌন হয়রানির মতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহারের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। নারী জাতিকে এ থেকে রক্ষা করে তাদের প্রকৃত মর্যাদা সংরক্ষিত করতে হলে হিজাব পালন ও সংযত চলাফেরাসহ ইসলামী নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
পরিশেষে আল্লামা শফী হুজুর ঈমানি দাবি আদায়ে আগামী ৫ মে’র ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কর্মসূচি বানচাল করতে নারীদের মাঠে নামার চেষ্টা কিংবা অন্য কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঈমানি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে এবং দাবি আদায় না হলে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
No comments:
Post a Comment