মাহমুদুর রাহমানের প্রতি আল্লামা শাফির চিঠি

জনাব মাহমুদুর রহমান,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। সরকার আপনাকে আপনার পত্রিকা অফিস থেকে অত্যন্ত অমানবিক কায়দায় গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। এরপর আপনার পত্রিকার প্রেসে তল্লাশির নামে সিলগালা করে পত্রিকা ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। আপনার অবর্তমানে পত্রিকাটি অন্য একটি প্রেস থেকে ছাপাতে গেলে সেখানেও পুলিশ হানা দিয়ে পত্রিকার কপি জব্দ করেছে এবং ১৯ জন সাংবাদিক-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে। এরপর সরকার আপনার মমতাময়ী বয়োবৃদ্ধ মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই খবর জানতে পেরে আপনি আপনার মাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া, পত্রিকার প্রেস খুলে দেয়া এবং নিরীহ ১৯ সাংবাদিক কর্মচারীকে মুক্তি দেয়ার ৩টি দাবিতে কারাগারেই অনশন শুরু করেছেন। আমরা এটাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার অত্যন্ত কঠোর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই দেখছি। আপনার এই প্রতিবাদ ও দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত।

আমরা জানি, আপনি যেমন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে শাহবাগের নাস্তিকদের মুুখোশ উন্মোচন করে তৌহিদি জনতাকে সচেতন করেছেন, তেমনি অনিয়ম-দুর্নীতি ও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপনার পত্রিকা ও লেখনীর মাধ্যমে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে জেলে গিয়েও আপনি অভিনব প্রতিবাদের মাধ্যমে আপনার সাহসী ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আপনার অসম সাহসী ভূমিকা পালন, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে, দুর্নীতি-অনিয়ম, জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি নাস্তিক ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার ব্যাপারে জাতিকে সজাগ করতে। আপনার সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য এদেশের সব ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহতায়ালা উত্তম প্রতিদান আপনাকে দান করবেন।
চিঠিতে বিশ্ববরণ্যে আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আমহদ শফী আরও বলেন, আমরা মনে করি সরকার আগে অন্য কোনো কারণে আপনার প্রতি রুষ্ট থাকলেও বর্তমানে আপনাকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের মূল কারণ নাস্তিক ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ তৌহিদি জনতার মহাজাগরণ। মহানবী (সা.) ও ইসলামের অবমাননাকারী ব্লগারদের মুখোশ উন্মোচন করাই আজ তাদের দৃষ্টিতে আপনার বড় অপরাধ। কিন্তু সেটা তৌহিদি জনতার রোষে পড়ার ভয়ে সরাসরি বলতে না পেরে নানা ছল-চাতুরি ও পুরনো মামলার আশ্রয় নিয়েছে। আমরা মনে করি বর্তমানে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি দাবিসহ হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি আদায়ের যে আন্দোলন চলছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করার নানা কৌশলের অংশ হিসেবেই সরকার মিডিয়ার ওপর হাত দিয়েছে এবং আপনাকে গ্রেফতার করেছে, আপনার সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ প্রকাশ করতে দিচ্ছে না।

আমরা মনে করছি, সরকার অন্যায় ও বেআইনিভাবেই আপনার পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করে, প্রেস কর্মচারীদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়েছে এবং আপনার মায়ের বিরুদ্ধে খুবই অমানবিকভাবে মামলা দায়ের করেছে। আমরা এরই মধ্যে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং আপনার মুক্তি দাবি করেছি। আমরা আবারও সরকারের প্রতি অবিলম্বে আপনার তিন দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, আপনাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সরকার আমাদের আহ্বান এবং আপনার ন্যায্য দাবি মেনে নেবে। অন্যথায় এদেশের তৌহিদি জনতা আপনাকে মুক্ত করার জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

আপনি অনশন করে সরকার এবং দেশ-জাতিকে আপনার বজ্রকঠিন প্রতিবাদ জানিয়ে দিয়েছেন। আপনার প্রতিবাদের সঙ্গে এদেশের ১৬ কোটি মানুষ একাত্ম। আপনার মতো সাহসী ঈমানদার মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা দেশ-জাতির জন্য বড় প্রয়োজন। অনশনের কারণে এরই মধ্যে আপনার জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আপনি মাহমুদুর রহমান জুলুম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি জ্বলন্ত ইতিহাস হয়ে গেছেন। আপনি এখন একা নন। এদেশের তৌহিদি জনতা আপনার সঙ্গে আছে।
মাহমুদুর রহমান, আমি শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। সুস্থ থাকলে এই চিঠি লেখার প্রয়োজন হতো না। আমি সরাসরি ঢাকায় গিয়ে জেলে আপনার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতাম এবং আপনার দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আপনাকে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করতাম।

তাই এই চিঠির মাধ্যমে আপনাকে এ পর্যায়ে তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে অনশন ভঙ্গ করার জন্য অনুরোধ করছি। আশা করি, আপনি আমার আহ্বানে সাড়া দেবেন।
আল্লাহ আমাদের অবশ্যই সহায় হবেন। আমরা যেমন কেবল ঈমানি দাবি নিয়ে আজ রাজপথে নেমেছি। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের ঈমান-আকিদার বিরুদ্ধে নাস্তিক ব্লগারদের অপকর্ম প্রকাশ করে জাতিকে সজাগ করার চেষ্টা করেছেন। সে হিসেবে আপনিও আমাদের ঈমানি আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। আপনার বিরুদ্ধে সরকারের যে কোনো অন্যায় পদক্ষেপ অবশ্যই হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে তৌহিদি জনতা রুখে দাঁড়াবে।

পরম করুণাময় আল্লাহ আপনার সহায় হোন।

২২/০৪/২০১৩