Thursday, May 9, 2013

বাস্তবেই কি ঘটেছিল ৫ই মে'র রাত্রে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে

আমারদেশ রিপোর্টার শিশির আব্দুল্লাহঃ (আমারদেশ অনলাইন সংস্কার থেকে সঙ্কলিত)

মতিঝিল গণহত্যা : সরকারি ভাষ্য বনাম প্রকৃত ঘটনা

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গত ৫ মে দিবাগত রাতের অন্ধকারে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জড়ো হওয়া ধর্মপ্রাণ আলেম ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের (যার একটি বড় অংশ বয়োবৃদ্ধ ও মাদরাসার শিশুছাত্র) ওপর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ, র‍্যাব ও আধাসামরিক বাহিনী বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের চালানো নৃশংস হত্যাযজ্ঞকে বিশ্ববাসী ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশ সরকার তা বেমালুম অস্বীকার করছে! ঘটনার পরদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকর্মীদের ওয়াশআউট অভিযানে কোনো ‘হতাহতে’র ঘটনা ঘটেনি। নিহত হওয়া তো দূরের কথা, কেউ আহতও হয়নি। ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদও বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেও কৌশলে আরেক জায়গায় প্রশ্নের জবাবে বললেন, ওইদিনের সংঘর্ষে নিহত ৪টি লাশ শাপলা চত্বরের মঞ্চের কাছ থেকে এবং আরও ৩টি লাশ ঘটনার পর তারা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন ওই রাতে। ৫ মে দিনে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ৩ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। একজন পুলিশ ওই রাতে মারা যাওয়ারও কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার তথা সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য অনুযায়ী ৫ মে সকাল থেকে ৬ মে ভোর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১ জন নিহত হয়েছেন। অথচ সরকারের বশংবদ মিডিয়ায় (পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশের মিডিয়ায় আগে যাও কিছু ছাপা হতো, এখন দৈনিক আমার দেশ এবং দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়ার পর ভীত হয়ে সরকারি ভাষ্য ও ইচ্ছার বাইরে তেমন কিছু ছাপে না) সর্বনিম্ন যে সংখ্যাটি ছাপা হয়েছে, তাতে ওই সময় ২২ জনের মৃত্যু ও পরে ওই ঘটনায় আরও একজনসহ ২৩ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে (সূত্র প্রথম আলো)। অবশ্য ৬ মে দিনের বেলায় ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে, হাটহাজারী ও বাগেরহাটে হেফাজতকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডারদের সংঘর্ষে আরও ২৮ জন নিহত হন। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর তার রিপোর্টার ও সূত্রের বরাতে বলেছেন, শাপলা চত্বরে কমপক্ষে একশ’ লোক নিহত হয়েছেন। ওই রাতে পুলিশের সঙ্গে ফকিরাপুল পয়েন্ট থেকে শাপলা চত্বর হয়ে হাটখোলা পর্যন্ত ছিলেন এমন একজন ফটো সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি ৫১ জনের বডি রাস্তায় ও বিভিন্ন ভবনের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেছেন, যার অধিকাংশের ছবি তার কাছে রয়েছে। তবে অভিযান হয়েছে অনেকগুলো রাস্তা দিয়ে, বহু অলিগলিতে। সেসব জায়গায় কী হয়েছে তা তিনি দেখেননি। তার ভাষ্যমতে, অপারেশনের সময় লক্ষাধিক লোক শাপলা চত্বরে অবস্থান করছিল। এরমধ্যে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ লোকেরাও ছিল, যাদের অনেকে পদদলিত হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারে।

প্রশ্ন উঠেছে, মতিঝেলে ব্ল্যাকআউট করে অপারেশন চালানো হলো কেন? সব মিডিয়াকে তাদের মতো করে কেন অপারেশন পরিচালনার ঘটনা কভার করতে দেয়া হলো না? অন্য অর্থে মিডিয়াকে বহিষ্কার করে কেন অপারশেন চালানো হলো? জলকামানের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি এবং সর্বশেষ ওয়াসার অনেক পানিবাহী গাড়িকে মতিঝিলে দেখা গেছে। বিভিন্ন দালান ও রাস্তার রক্ত পরিষ্কারে এসব পানিবাহী গাড়ি ব্যবহার করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ও হেফাজতকর্মীদের বর্ণনা অনুযায়ী, যৌথবাহিনী ওইদিন রাত ৩টার দিকে শাপলা চত্বরের মূল মঞ্চ দখল করে নিলেও অভিযান চলেছে সকাল প্রায় ৬টা পর্যন্ত। মূল কিলিং হয়েছে দুই পর্যায়ে। হেফাজতকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য অভিযান শুরুর পর মঞ্চ দখলের আগমুহূর্তে অর্থাত্ যে ১০ মিনিটের কথা বলা হয়েছে, তখন খুব কাছ থেকে সরাসরি হেফাজতকর্মীদের গুলি করা হয়। এতে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ ঘটনার অবতারণা করে যৌথবাহিনী সফল হয়। সহকর্মীদের মাটিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য দেখে হেফাজতকর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। ১০ মিনিটেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সমাবেশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে বড় কিলিংগুলো হয় সোনালী ব্যাংক ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দা, বাংলাদেশ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ডিসিসিআই, আমিন মোহাম্মদ ভবন, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ভবন, ইউনুস সেন্টার, সারা টাওয়ার, ঢাকা ব্যাংকসহ ওই এলাকার বিভিন্ন বড় বড় দালানের সিঁড়ি ও বারান্দায়। এসব স্থানে পলায়নপর হেফাজতকর্মীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ মাইকে ইত্তেফাক ও হাটখোলা ধরে যাত্রাবাড়ীর দিকে পালিয়ে যেতে বলেছিল। সে নির্দেশ তারা মানেননি। ভয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন—এই ছিল তাদের অপরাধ। অতিসম্প্রতি আমার দেশ থেকে অন্য পত্রিকায় যোগ দেয়া একজন সাংবাদিক ঘটনার সময় এ এলাকায় ছিলেন। তিনি জানান, বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় দৌড়ে গিয়ে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অনেককে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। পুলিশ ভাবছিল, বঙ্গভবনে আক্রমণ করতে তারা সেদিকে যাচ্ছিল। রাজউক ভবনের আশপাশে তারা পুলিশের নৃশংসতার শিকার হয়। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আশপাশে যারা গিয়েছিল, তাদের ওপরও ব্যাপক গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে অনেকে হতাহত হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল। ভবনগুলোতে যারা আশ্রয় নিতে গিয়েছিল, আক্রমণকারী ভেবে পুলিশ ও র্যাব তাদের ওপর গুলি চালিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ ঘটে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সরকারের তরফ থেকে মঞ্চ দখলের ১০ মিনিটের কিছু বর্ণনা ও হতাহতের কথা বলা হলেও তার আগে-পরে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়েছে।

দুটি টিভি চ্যানেলের এমবেটেড জার্নালিস্টরা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে থাকলেও তারা এসব দৃশ্য দেখাননি। এর মধ্যে সময় টিভির দীর্ঘ লাইভ সম্প্রচারে মাত্র দুজন হেফাজতকর্মীকে গুলি ও পরে পিটিয়ে মারার কয়েক সেকেন্ডের দৃশ্য দেখানো হয়। তাদের একাধিক ক্যামেরাম্যান ঘটনার দৃশ্য ধারণ করছিলেন। ফেরার পথেও অনেকের ওপর আক্রমণ হয়েছে। লালবাগে হেফাজতের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ৬ মে সকালে নিহত ও গুরুতর আহত শ’দুয়েক লোককে দেখা গেছে বলে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে শ’পাঁচেক আহত লোক চিকিত্সা নিয়ে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, আল-বারাকা হাসপাতালসহ মতিঝিলের আশপাশের হাসপাতালগুলোতে হতাহত বহু লোককে নেয়া হলেও পুলিশের হুমকিতে তারা নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত বলতে অপারগতা জানিয়েছেন। সর্বোচ্চ তিন হাজার লোক নিহত ও নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছে আয়োজক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা লিখিত বিবৃতিতে এ সংখ্যা ২ হাজার বলেছিল। ৬ মে রাতেই সংশোধিত সংখ্যা ৩ হাজার বলে জানায়। বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে নিহতের সংখ্যা হাজারখানেক। কোনো কোনো নেতা বলেছেন দুই হাজার। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার শত শত নিহত ও নিখোঁজ হওয়ার কথা বলেছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাত দিয়ে নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজার উল্লেখ করেছে। আমাদের দুজন ফটো সাংবাদিক ও দুজন রিপোর্টার ওইদিন রাতের অভিযান কাভার করতে চাইলেও যৌথবাহিনী তাদের পরিচয় জানার পর তাদের সহযোগী হতে বারণ করে। সময় টিভিতে আমরা সরাসরি অভিযানের অংশবিশেষ দেখেছি। দুজন হেফাজতকর্মীকে প্রথমে গুলি ও পরে পিটিয়ে মারার কয়েক মুহূর্তের দৃশ্য সময় টিভি দেখিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্রের গুলির আওয়াজও শুনিয়েছে। শটগানে ছোড়া রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ তো ছিলই।

গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট এবং ৬ মে এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এ ঘটনাকে গণহত্যা (ম্যাসাকার) বলে উল্লেখ করে। এছাড়া ঘটনার পর তাত্ক্ষণিকভাবে সিএনএন, এএফপি, এপিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বহু হতাহতের খবর প্রচার ও প্রকাশ হয়।
বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনও নিহত হননি বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ! কন্ট্রোল রুম থেকে অভিযানটির নিয়ন্ত্রণকারী এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও দাবি করেন, যৌথবাহিনী সেদিন কোনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করেনি।
তার হিসাবমতে, ৫ মে (রোববার) সকাল থেকে শুরু করে সোমবার রাতে ‘অপারেশন সিকিউরড শাপলা ওয়াচ’ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত একজন পুলিশসহ মোট ১১ জন নিহত হন। বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এই ১১ জনের কেউ অপারেশনের সময় নয়, রোববার দিনে ও অপারেশনের পরে তাদের বডি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে গত ১ মে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী সাভারে রানা প্লাজায় ওই মুহূর্তে নিখোঁজের সংখ্যা হঠাত্ কমবেশি ১৩শ’ থেকে নামিয়ে ১৪৯ জনে নিয়ে এসেছিলেন। ওই সময় পর্যন্ত মাত্র চারশ’র মতো মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। জিওসি ১৪৯ জন বলার পর বিরোধীদলীয় নেতা লাশ গুমের অভিযোগ আনেন। অবশেষে জিওসির বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ হয়ে আরও প্রায় পাঁচশ’ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনও তিনটি তলায় উদ্ধার অভিযান বাকি রয়েছে। এই তিন তলায় এখনও বহু লাশ রয়েছে। বুধবার জিওসি দু-একদিনের মধ্যে অভিযান বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। আগে বলেছিলেন, একটি লাশ থাকা পর্যন্ত তিনি অভিযান চালিয়ে যাবেন।

হেফাজত ওয়াশআউট শাপলা অভিযানে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়া ওই রাতের বেশকিছু ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ, আহতদের সাক্ষাত্কার ও বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে ডিএমপি কমিশনারের দাবি জঘন্য মিথ্যাচার বলেই প্রতীয়মান হয়।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের দেয়া মূল বিষয়গুলো হলো—এক. রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে মাত্র ১০ মিনিটে অপারেশন শেষ হয়। দুই. এ সময় বিভিন্ন ধরনের ‘নন-লেথাল অস্ত্র’ এবং ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস লজিস্টিক’ (সারা বিশ্বে স্বীকৃত বিক্ষোভ দমনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি) ব্যবহার করা হয়। তিন. মিডিয়ার সামনে অপারেশন হয়েছে এবং দুটি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ‘দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দিয়ে অপারেশন চালানো হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়’(!)। চার. কম্পিউটারে ফটোশপ করে বানানো ছবি দিয়ে ইন্টারনেটে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পাঁচ. হেফাজত পুলিশকে নিহতদের তালিকা দেয় না কেন? ছয়. সচিবালয়ে হামলা ও ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা ছিল হেফাজতের। সাত. তিরিশ লাখ টাকা লুট, বায়তুল মোকাররম ও জুয়েলারি মার্কেটে আগুন দেয় হেফাজত।

সরকারের পক্ষে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার ব্যাপক ফারাক রয়েছে। প্রথমত, নিহতের সংখ্যা নিয়ে তিনি জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেছেন, অপারেশনের সময় কেউ নিহত হয়নি; কিন্তু হেফাজতের কট্টর সমালোচক প্রথম আলো পত্রিকাও পরদিন তাদের প্রথম পাতায় অপারেশনে ১১ জন নিহতের খবর জানায়! ‘রোববারের সংঘর্ষ ও অভিযান : এক পুলিশসহ নিহত ২২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে প্রথম আলো বলেছে, ‘২২টি লাশের মধ্যে ১১টি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ও মর্গে গেছে সোমবার ভোরের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, রোববার গভীর রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় তারা নিহত হয়েছেন। বাকি ১১ জনের লাশ রোববার দুপুর থেকে মধ্যরাতের মধ্যে এসেছে।’ একুশে টিভি ৬ মে ভোর ৪টার খবরে তখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হওয়ার ও অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দিয়েছিল। তার ২০ মিনিটের মাথায় দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে সম্প্রচার বন্ধ করে দিলে একুশে টিভিসহ শাপলা চত্বর অভিযানে হতাহতের খবর প্রচার বন্ধ করে দেয়। দিগন্ত টিভি বন্ধ করার আগে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে শত শত লোক হতাহত হওয়ার কথা প্রচার করা হয়েছিল।

অপারেশনের সময় ফকিরাপুলের দিক থেকে যৌথবাহিনীর সঙ্গে থাকা একজন ফটো সাংবাদিক আমার দেশ-কে যেসব ছবি ও তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা গেছে, শাপলা চত্বরের পাশে সোনালী ব্যাংকের দু’দিকের সিঁড়ি, দুই সিঁড়ির উপরের মেঝে, গাড়ির বারান্দা, মধুমিতা সিনেমা হলের দু’পাশের দুই পেট্রল পাম্পের সামনের রাস্তা এবং পাশে সিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় অন্তত ৫১টি গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ পড়ে ছিল। এর মধ্যে রাত সাড়ে তিনটার দিকে মধুমিতা সিনেমা হলের পাশের পেট্রল পাম্পের কার্নিশে ‘মরা পাখির মতো’ একটি দেহ ঝুলে থাকতে দেখেন বলে জানান ওই ফটো সাংবাদিক। অন্ধকার ও কিছুটা দূরে হওয়ার কারণে মৃতদেহটির ছবি তিনি তুলতে পারেননি। পাশের একটি পিকআপ ভ্যানেও তখন পড়ে ছিল একটি লাশ। অপারেশনে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪৪ জন নিহতের ছবি মিডিয়াকর্মীদের কাছে রয়েছে।

অপরদিকে অনলাইনে প্রচারিত বিভিন্ন ছবি, ভিডিও এবং কিছু ‘অসমর্থিত সূত্রে’র বরাত দিয়ে গত সোমবার (৬ মে) এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন শাপলা চত্বর অপারেশনে নিহতের সংখ্যা ২৫শ’ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আর যা-ই হোক, গণমাধ্যমে প্রচারিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের প্রায় ৩ হাজার কর্মী নিহত অথবা নিখোঁজ রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

এদিকে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে নেয়া সাক্ষাত্কার এবং অনলাইনে প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে গুলিবিদ্ধ একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালানোর সময় রাস্তায় পড়ে থাকা অনেক লোকের ওপর দিয়ে গেছেন। তবে এদের মধ্যে কে নিহত আর কে আহত, তা তাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি ভবনের (দেয়ালে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনমূলক পোস্টার লাগানো) বারান্দায় ব্যাপক পরিমাণ জমাটবাঁধা রক্তের পাশে কয়েকটি ‘রাবার দিয়ে মোড়ানো স্টিলের বুলেটে’র খোসা পড়ে আছে। সে জায়গা থেকে একজন আলেমের লাশ উদ্ধার করা হয়। মানবজমিন পত্রিকায় সোমবার সে ছবি ছাপা হয়। এ স্পটের স্টিল ফটোগ্রাফ ও ভিডিও দেখে এটা স্পষ্ট যে, ওই আলেম একাধিক গুলিতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ঘটনার পরদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে রাতে অন্তত ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর প্রচার হয়। যদিও মানবাধিকার সংস্থা অধিকার প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে মঙ্গলবার তাদের এক প্রতিবেদনে গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্নভাবে আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে জানিয়েছে।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, সিএনএন, এএফপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম অত্যন্ত কাছ থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে বহু লোক আহত হওয়ার খবর জানায়।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার রাত ৪টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ লোক তাদের কাছে আহত অবস্থায় এসেছেন, যার বেশিরভাগই ছিল গুলিবিদ্ধ।

শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিত্সারত হেফাজতকর্মী ঢাকা রামপুরা মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা রহমতুল্লাহ শাপলা চত্বরের মঞ্চের খুব কাছে বসা ছিলেন। রাত ৩টার দিকে তাদের পাশে একাধিক সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটলে আতঙ্কিত অনেকে মাটিতে শুয়ে পড়েন। এ সময় তিনি রাস্তার পাশে যাওয়ার জন্য দাঁড়ালে তার হাঁটুর নিচে গুলি বিদ্ধ হয় বলে জানান। এরপর গুলির ঝাঁক আসতে থাকে। ততক্ষণে তিনি রাস্তার পাশে আশ্রয় নেন। তার ধারণা, শুধু শাপলা চত্বরের মঞ্চের আশপাশে বসে বা শুয়ে থাকা বহু লোক শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রহমতুল্লাহর অনুমান, এ সংখ্যা দুই থেকে তিনশ’ও হতে পারে।

তিনি আরও জানান, যৌথবাহিনীর গুলির লক্ষ্য ছিল অনেক নিচের দিকে যা শুয়ে ও বসে থাকা লোকজনের কোমরের উপরের অংশেই বেশি লেগেছে।
এখন প্রশ্ন হলো, ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী অপারেশনে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা না হলে এত লোক গুলিবিদ্ধ হলো কীভাবে?
হেফাজতের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকসহ অন্য স্থাপনাগুলো ছিল সবচেয়ে নিরাপদ : হেফাজতের কর্মীদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকসহ অসংখ্য ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা। ওই এলাকায়ই রয়েছে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়। সেগুলোতে কোনো ভাংচুর, আগুন বা কোনো ক্ষতি করেনি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ সম্পূর্ণ মনগড়া। সারাদিন কোনো পর্যায়েই সচিবালয় এলাকায় হেফাজতকর্মীদের দেখা যায়নি। এলাকাটি সবসময়ই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

হেফাজতকর্মীরা বিভিন্ন ভবন, কোরআন শরিফের দোকান, হাউস বিল্ডিং অফিসে আগুন দিয়েছে বলা হলেও এসব এলাকা হেফাজতকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এমনকি দিনে সিপিবি অফিসে আগুন লাগার সময়টিও এ এলাকা মূলত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুলিশের বিশেষ ধরনের গ্রেনেড থেকে এখানে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। হেফাজতকর্মীরা বায়তুল মোকাররম ও জুয়েলারি মার্কেটে আগুন দিয়েছে বলে যে মিথ্যা বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, সেটি মঙ্গলবারের দৈনিক ইনকিলাব ও মানবজমিনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য উল্লেখ করে জানানো হয়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে সরকারদলীয় ক্যাডাররা মার্কেটে আগুন দেয়। আর ৩০ লাখ টাকা লুট কোথা থেকে কখন করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কিছু না বলেই অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে সরকার শাপলা চত্বরে রাস্তার বাতি নিভিয়ে ব্ল্যাক আউট করে অভিযানের প্রস্তুতির সময় পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হেফাজতকর্মীরা বিভিন্ন প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেয়। রোড ডিভাইডার, আশপাশের আসবাবপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে এসব ব্যারিকেড দেয়া হয়।

প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে মিথ্যাচার : বেনজীর আহমেদ আরও দাবি করেন, বিভিন্ন ধরনের ‘নন-লেথাল অস্ত্র’ (প্রাণঘাতী নয় এমন) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও আহতদের দেয়া তথ্যমতে বহু ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তার এ বক্তব্য যে কত জঘন্য মিথ্যাচার, তা বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশ র‍্যাব-বিজিবির অ্যাকশনের অসংখ্য ছবিতেই বোঝা যায়।
সাংবাদিকদের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অপারেশনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৪৭ রাইফেল ও চাইনিজ রাইফেল (বিজিবি ও র্যাব), একে-৪৭-এর ইউএস ভার্সন এম-১৬, মেশিনগান, সাবমেশিন কারবাইন, চাইনিজ রাইফেল, শটগান (র‍্যাব-পুলিশ) ইত্যাদি। মধুমিতা সিনেমা হলের পাশে পেট্রল পাম্পের সামনে থেকে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হেফাজতের এক কর্মীকে লক্ষ্য করে ‘অ্যাকশন মুডে’ রাইফেল তাক করে আছে। আর কর্মীটি হাতজোড় করে কান্নাকাটি করছেন। র্যাব সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। শাপলা চত্বর এলাকায় অনেক পুলিশ সদস্য গুলি করছে—এমন দৃশ্যের ছবিও রয়েছে। একাধিক ভিডিওতে মুহুর্মুহু গুলি করতে দেখা গেছে শতাধিক পুলিশকে।

শাপলা চত্বর অপারেশনে যারা হতাহত হয়েছে, তাদের পোস্টমর্টেম অথবা ক্ষত পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে কী কী আগ্নেয়াস্ত্র ও মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে সে রাতে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকরা হতাহতদের ক্ষত দেখে শাপলা অভিযানে মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ৬ মে’র বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, সাধারণত যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়—এমন অস্ত্রও বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে।
আসলে কি ১০ মিনিটের অপারেশন : বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বেনজীর আহমেদ জানান, রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে মাত্র ১০ মিনিটে অপারেশন শেষ হয়! তার দেয়া এ তথ্য যে নগ্ন মিথ্যাচার, তা ৫ মে রাত ২টা ৩০ মিনিট থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত যারা দিগন্ত টিভি ও সময় টিভির প্রথমে ‘ফোনোলাইভ’ ও পরে লাইভ সম্প্রচার করেছেন, তারা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
রাত ১১টার পর থেকেই কাকরাইল ও পল্টন মোড়ে শত শত গাড়ি থেকে নেমে যৌথবাহিনী অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়। পরে রাত সোয়া দুইটার সময় একদিকে ফকিরাপুল মোড় ও অন্যদিকে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ফাইনাল অপারেশন শুরু হয়। অভিযানে থাকা একজন সাংবাদিক জানান, ফকিরাপুল বাজার পার হয়েই গুলি করতে করতে মতিঝিলের দিকে এগুতে থাকে অপারেশনের অগ্রবর্তী দল। এরপর রাস্তায় বেশকিছু ব্যারিকেড ডিঙ্গিয়ে একটানা গুলি করে রাত তিনটার পর শাপলা চত্বরে পৌঁছে। এর মধ্যেই দৈনিক বাংলার দিক থেকে যৌথবাহিনীর বড় দলটি শাপলা চত্বরের মূল এলাকা (মঞ্চসহ) দখলে নেয়। সেখান থেকে একটি দল আবারও খালি রাস্তায় ফাঁকা গুলি করতে করতে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত যেতে রাত পৌনে ৪টা বাজে। এরপর মূল অভিযান শেষ হলেও চলে লুকিয়ে থাকা হেফাজতকর্মীদের খুঁজে বের করার অভিযান। তা চলে সকাল ৬টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশের মিডিয়া তাদের ভাইব্রেন্ট মর্যাদা ও চরিত্র হারিয়েছে, বড় প্রমাণ শাপলা চত্বরের হামলার খবর ধামাচাপা দেয়া : ‘মিডিয়ার সামনে অপারেশন হয়েছে এবং দুটি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করেছে’ বলে ডিএমপি কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আংশিক সত্য। আগেই বলা হয়েছে, রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মূল অভিযানের সময় শুধু দু-তিনটি টিভি চ্যানেল রিপোর্টারের ধারাভাষ্য সংবলিত ‘ফোনোলাইভ’ সম্প্রচার করেছে। এতে গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ শোনা গেলেও কোনো ফুটেজ দেখায়নি। তবে মঞ্চ খালি করার বিশেষ মুহূর্তের যৌথবাহিনীর গুলিবর্ষণ ও বিভিন্ন ভবনের কাছে কিলিং অপারেশন বাদ দিয়ে লাইভ সম্প্রচার করে ইরাক যুদ্ধের সময় বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাওয়া এমবেটেড জার্নালিজমের সফল নজির স্থাপন করেছে সময় টিভি।
আবার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দিয়ে অপারেশন চালানো হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। তার এই বক্তব্যও মিথ্যা। কারণ সেদিন রাত ৪টা ২৪ মিনিটে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়। এর একটু পরেই একুশে টিভি সে সংবাদ পরিবেশন করে। তখনও সময় টিভি শাপলা চত্বরের অপারেশন-পরবর্তী বিভিন্ন দৃশ্য লাইভ দেখাচ্ছিল। এ থেকে এমন অনুমান মোটেও অমূলক নয়, অপারেশনের শেষদিকে ‘ক্যাজুয়ালটি’র ভয়াবহতা বেশি দেখে তার ফুটেজ প্রচার বন্ধ করতেই ‘বশ মানবে না’ এমন দুটি টিভি স্টেশনই তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। মানবজমিন, নয়া দিগন্ত ও ইনকিলাবসহ কিছু সংবাদপত্রে শাপলা চত্বরে যৌথবাহিনীর ম্যাসাকারের কিছু ছবি ছাপা হলেও অধিকাংশ সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল কোনো ছবি ছাপেনি বা প্রচার করেনি।
বেনজীর আহমেদের দাবি, ‘কম্পিউটারে ফটোশপ করে বানানো ছবি দিয়ে ইন্টারনেটে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ তার এ বক্তব্য যে ঠিক নয়, তার প্রমাণ অনলাইনে লাশের যেসব ছবি পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই ঢাকা শহরের পেশাদার ফটো সাংবাদিকদের তোলা। আমার দেশ-এর অনলাইনে ওই রাতে তোলা বহু ছবি ছাপা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু স্টিল ও ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে। ফটোশপের ছবি দিয়ে কেউ প্রতারণা করলে পুলিশের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে মামলা, লাশ চাইতে আসবে কীভাবে : ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে যুক্তি দিয়েছেন, হেফাজত পুলিশকে নিহতদের তালিকা দেয় না কেন? এর জবাবে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লক্ষাধিক লোকের বিরুদ্ধে যেখানে ২২ মামলা হয়েছে, সেখানে মামলার ভয়ে অনেকেই তাদের সন্তান ও আত্মীয়ের খোঁজ নিতে আসছেন না। স্বজনের খোঁজ নিতে পারছেন না। হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর কোনো হদিস তারা এখনও পাচ্ছেন না। অনেকে মাদরাসা ও বাড়ি ছেড়ে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে প্রকৃতপক্ষে কতজন নিহত বা নিখোঁজ রয়েছেন, তা বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তারা একটি ‘অনুসন্ধান সেল’ খুলে সবাইকে নিখোঁজদের তথ্য দিতে বলেছেন। খুব দ্রুত তারা একটা তালিকা করতে পারবেন বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

No comments:

Post a Comment

ঘোষনাঃ ৫ই মে' এর যে কোন দৃশ্য আপনার মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় ধারন করা কোন ছবি বা ভিডিও যদি থাকে তা নিজ দ্বায়িত্বে অনলাইন এ্যাক্টিভিটিস নেটওয়ার্কের কাছে প্রেরন করুন অথবা আমাদের ইমেইল করুন-
hifazatheislam@gmail.com
আপনার পাঠানো যে কোন তথ্য করতে পারে সত্যকে প্রস্ফুটিত।


 
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আন্দোলন নিয়ে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের মনে রাখা উচিত, ধোকাবাজি করে পার পাওয়া যাবে না
---
মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক
বাংলাদেশের নাস্তিকরা ফেরাউন নমরুদের চেয়েও জঘন্য
---
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফাসসীরে কোরআন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী