Wednesday, May 1, 2013

হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী সমাজকে সুন্দর ও শৃংখল করবে

লেখক: রাবেয়া বেগম তুহিন, এল.এল.বি (অনার্স) আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ শুধু বাংলাদেশে নয় এই উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সরকার এই দেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করার জন্যে স্বাধীনতার যুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার সাথে ইসলাম ও বরেণ্য আলেম সমাজকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যারা ইসলামের কথা বলেন, সমাজে ইসলামের প্রতিষ্ঠা চান, পাইকারী হারে তাদের স্বাধীনতার বিরোধী বলে নাস্তিকদোসররা দেশ বিদেশে অবিরাম মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেই লং মার্চের সমাবেশ থেকে ১৩টি দাবির কথা তুলে ধরে হেফাজতে ইসলাম। সরকার ও তাদের উচ্ছিষ্টভোগীরা এই দাবিগুলো নিয়ে চরম মিথ্যাচার এবং ভুল ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। হেফাজতের ১ম দাবিটি হচ্ছে এই দেশের ধর্মের শাশ্বত সৌন্দর্যের লক্ষ্যে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের পুনঃ স্থাপন। এই দাবিটি ৩৫ বছর ধরে আমাদের সংবিধানের অংশ ছিল এবং গণভোটের মাধ্যমে জাতি এতে সম্মতি দিয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেছে। হেফাজতের লং মার্চ প্রমাণ করেছে যে, দেশের বৃহত্তম আলেম সমাজ এবং সাধারণ মুসলমান এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান। তাদের দ্বিতীয় দাবিটি হচ্ছে, ইসলাম বিদ্বেষের গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত শাহবাগ আন্দোলনের সংগঠিত ও নেতৃত্বদানকারী চিহ্নিত নাস্তিক মুরতাদদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা। ১০ নং দাবিতে রয়েছে ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি অনেকগুলো বইতেই ইসলাম বিরোধী কথা ও ব্লুফিল্ম-এর নামে বেহায়াপনা শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এইসব বন্ধের দাবি কি কখনো অযৌক্তিক হতে পারে? নিশ্চয় না।

হেফাজতের ১২ ও ১৩ নং দাবি হচ্ছে যথাক্রমে দাড়িটুপি ও ইসলামী কালচার নিয়ে হাসি ঠাট্টা ও নাটক সিনেমায় খল নায়ক ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাসে পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা এবং ষড়যন্ত্রমূলক ধর্মান্তকরণ ও মিশনারী তৎপরতায় নিয়োজিত এনাজিও ও খ্রীস্টান মিশনারীদের তৎপরতা বন্ধ করা। হেফাজতের ৭নং দাবিতে রয়েছে বেহায়পনা, অশ্লীলতা, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও ব্যভিচার বন্ধ করতে হবে। নারীদেহের সৌন্দর্য সবাইকে বিলাবার বস্তু নয়। কেউ কেউ মনে করেন পর্দা মানে মহিলাদের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখা, এটা সঠিক নয়, পর্দা উঠিয়ে দিয়ে ভোগবাদী সমাজে মেয়েরা বেশি সম্মান বা মর্যাদা পায়নি। অশালীন পোশাক পরিয়ে পুরুষরা তাদের হীন লালসা চরিতার্থ করতে সুযোগ করে নিচ্ছে। পর্দাহীনতার পরিণতি হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি ইভটিজিং। ইভটিজিং এরই মধ্যে কেড়ে নিয়েছে ফাহিমা, সিমি, চম্পারানীসহ আরো অনেকের প্রাণ। এছাড়া ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানসহ আরো অনেক অভিভাবককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বখাটেরা। র‌্যালী, মানব বন্ধন, সভা ও সেমিনার করে একটি বিষয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা যায় কিন্তু ইভটিজিং ও ধর্ষণের মতো একটি সামাজিক ক্যান্সারকে নির্মূল করা যায় না। যৌন নিপীড়ন বন্ধের আইন ৫০৯ ধারা দ-বিধি করেও এসব অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। কথায় আছে। “সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ/দিবো কোথা।”

বর্তমানে সরকারের অনেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা কোন ধরনের বিচার বিশ্লেষণ না করেই বলতে শুরু করেছেন যে, হেফাজতের দাবি মধ্যযুগীয় এবং এর কোনটিই বাস্তবায়ন করা হবে না। এই দাবিগুলি বাস্তবায়িত হলে দেশ নাকী হাজার বছর পিছিয়ে যাবে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ছাত্রীদের বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা, ঢাবিতে নববর্ষ উৎসবে তরুণী লাঞ্ছিত হওয়া, টিভি কিংবা পত্রিকার পাতায় সুন্দরি প্রতিযোগীতার নামে নির্বাচিত বোনটির অর্ধউলঙ্গ ছবি কি আমাদের মধ্যযুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না। নারী স্বাধীনতার নামে ছেলে মেয়েদের অবাধ বিচরণকে মর্ডাণ বলে বৈধতা দিতে গিয়ে এখন বাংলাদেশে প্রতিদিনই অনেক মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে। এইসব কি আমাদের হাজার বছর পিছিয়ে দেয় না? এইসব অবস্থায় পরিবর্তনের আমাদের যুবসমাজ তথা তরুণ তরুণীদের হাতে দিতে হবে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং মহানবী (সা.)-এর হাদীস শিক্ষা। আজ মেয়েদের মান সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার্থেই হেফাজত ইসলামের এই প্রাণের দাবি, মেয়েরা যেকোন পেশায় যেতে পারবে। তবে তা হতে হবে পর্দার সহিত, শালীনভাবে এবং ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। তবেই তো আমরা পত্রিকার পাতা উল্টালে বা টিভির পর্দায় আর কোনো বোনের শ্লীলতাহানি, ইভটিজিং বা ধর্ষণের কথা শুনতে বা দেখতে হবে না।

No comments:

Post a Comment

ঘোষনাঃ ৫ই মে' এর যে কোন দৃশ্য আপনার মোবাইল ফোন বা ক্যামেরায় ধারন করা কোন ছবি বা ভিডিও যদি থাকে তা নিজ দ্বায়িত্বে অনলাইন এ্যাক্টিভিটিস নেটওয়ার্কের কাছে প্রেরন করুন অথবা আমাদের ইমেইল করুন-
hifazatheislam@gmail.com
আপনার পাঠানো যে কোন তথ্য করতে পারে সত্যকে প্রস্ফুটিত।


 
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আন্দোলন নিয়ে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছে। সরকারের মনে রাখা উচিত, ধোকাবাজি করে পার পাওয়া যাবে না
---
মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক
বাংলাদেশের নাস্তিকরা ফেরাউন নমরুদের চেয়েও জঘন্য
---
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফাসসীরে কোরআন মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী